প্রথমা | একটি অণুপ্রেমের গল্প
শামিম মনোয়ার:
'এই দ্যাখো আমি প্রথম হয়েছি। ওয়ান স্টেপ এ্যাহেড। তুমি লাড্ডু তুমি পচ্চা, আমার সাথে পারো নাই'। নুপুর দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে। আবির পিছনে পড়ে আছে। সেও হাঁপাচ্ছে।
আবির কোন দিনও নুপুরের সাথে পারে নাই। সেই কেজি স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত। দুজনের প্রতিযোগিতা, কি লেখা পড়ায়, কি স্কুল কলেজের স্পোর্টস বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। নুপুর বরাবরই প্রথম হয়েছে বা আবিরের চেয়ে এগিয়ে থেকেছে। নুপুরের ভাষায় সে সব সময় ওয়ান স্টেপ এ্যাহেড।
নুপুরের জন্য আবির বাবা মার কাছে বার বার বকা খেয়েছে। নুপুর কি খায় আর তুমি কি খাও? একই তো তারপরও ওর সাথে পারো না কেনো। তাই ছোটবেলা থেকে অাবির নুপুরকে শত্রু মনে করে। কিন্তু দুজন আবার কি এক রহস্যজনক কারণে কেজি স্কুলের পর একই মাধ্যমিক স্কুলে আবার মাধ্যমিকের পর একই কলেজে ভর্তি হয়েছে। তবে কলেজ শেষে দু জন দুদিকে। নুপুর মেডিক্যাল কলেজে আর আবির ইঞ্জিনিয়ারিং এ। তারপর থেকে দুজনের বেশ কিছু বছর আর দেখা হয় নি, প্রতিযোগিতা নেই। আবির হাঁপছেড়ে বেঁচে গেছে তবে মনের ভিতর তার শত্রুর জন্য কেমন যেনো একটা অাকুলতা রয়ে গেছে।
পড়াশোনা শেষ করে সরকারি প্রথম শ্রেণির চাকুরি জুটিয়ে ফেলেছে আবির। চাকুরি বেশি দিন হয় নি। বাবা চাচ্ছেন আবির বিয়ে করুক। মা এর শরীরটা ভালো না। পাত্রী নাকি দেখা হয়ে গেছে। এখন শুধু কাজী অফিসে গিয়ে কাবিন নামায় সই করে বিয়ে রেজিস্ট্রী করে আসতে হবে। বিশাল অায়োজন করে পরে বউ ঘরে তোলা হবে। কারণ পাত্রীর শেষ পরীক্ষাটা এখনো শেষ হয়নি। আবির বাবার একটা কথাও ফেলতে পারবে না। কারণ বাবাকে সে কখনো কষ্ট দিতে পারবে না। স্কুল শিক্ষক বাবা তাকে অনেক কষ্ট করে পড়িয়েছেন। সে পাত্রীর ছবি পর্যন্ত দেখে নাই, কোন খোঁজ খবরও নেয় নাই। বাবা যা বলবেন সেটাই ফাইনাল।
তবুও ছোটবেলার শত্রুর জন্য আবিরের মন কাঁদে, বাবাকে বলতে পারে না।
গাড়ী থেকে নেমে আবির বাবার পিছনে পিছনে কাজী অফিসের দিকে হাঁটছে। ওখানে আগে থেকে পাত্রী পক্ষ নাকি কনে নিয়ে হাজির হয়েছে। আবির মাথা নিচু করে হাঁটে আশেপাশের কোন কিছু তাকিয়ে দেখার মত ইচ্ছা হয় না।
কাজী সাহেবের বিশাল একটা টেবিলের সামনে কয়েকজন লোক বসে আছে। আবির লক্ষ্য করে তেমন দেখে না। তার পাশের চেয়ারেই একটা মেয়ে বসে আছে ঘোমটা দেওয়া। আবিরের মনের ভিতর কোন কৌতুহল নেই।
কাজী সাহেব দুপক্ষের কাছে সব শুনে রেজিস্ট্রার বইয়ে সব লিখলেন। স্বাক্ষরের জন্য বইটি পাত্র পাত্রীর সামনে এগিয়ে দিলেন। মেয়েটি আবিরের আগেই বইটি কাছে টেনে নিলো। আবির দেখলো মেয়েটি স্বাক্ষর করলো - নুপুর আহমেদ।
আর ঘোমটার ফাঁক দিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো - এখানেও আমি আগে, আমিই প্রথম।
No comments