দি ম্যাসেজ অন এমিলি'স নিউ ফোন | রহস্য অণুগল্প
মূল : চার্লস লি
রূপান্তর : শামীম মনোয়ার
এমিলি ব্রাডলির জন্মদিন। সে দশে পা দিলো। বাবা নেই। মা আর সৎ বাবার কাছে সে জন্মদিনের উপহার হিসেবে একটা স্মার্ট ফোন চেয়েছিল। কিন্তু দুজনেই বিরক্ত কারণ এত অল্প বয়সের একটি মেয়ের হাতে তারা ফোন সেট তুলে দিতে চায়নি। অবশ্য তাকে অবাক করে দিয়ে তারা তাকে একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিলো জন্মদিনের সারপ্রাইজ হিসেবে।
এমিলি ঘুমানোর সময় মাথার কাছে ফোনটা রেখে দিলো। হঠাৎ ফোনটাতে আলো জ্বলে উঠলো, একটা ম্যাসেজ এলো। সে অবাক হয়ে গেলো কারণ কেউ তো এখনো জানে না তার একটা নতুন ফোন হয়েছে।
সে ফোনটা হাতে তুলে নিলো ম্যাসেজটা পড়ল।
- 'ভালো হয়েছে। এখন আমি তোমার সাথে কথা বলতে পারবো।'
এমিলি বুঝতে পারলো না ম্যাসেজটা কে পাঠিয়েছে। সে ম্যাসেজের কোন উত্তর দিলো না। কারণ তার মা বাবা বলে দিয়েছে রাত ন টার পর ফোন ব্যবহার না করতে। এখন রাত দশটা বাজে। কিন্তু সে ভিতরে ভিতরে প্রবল ভাবে জানতে চাইলো- কে ম্যাসেজটা পাঠালো।
সে ফোনটা বন্ধ করতে যাচ্ছে ঠিক তখনই আরেকটা ম্যাসেজ এলো-
-দয়া করে সাড়া দাও। খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এমিলি এই মুহুর্তে বাবা মার কথার অবাধ্য হয়ে ম্যাসেজের সাড়া দিতে সিদ্ধান্ত নিলো।
' আপনি কে?' - এমিলি লিখলো।
- ' তোমার ভাই '
- ' আমার তো কোন ভাই নেই '
- ' হ্যা তোমার ছিলো '
- ' আপনি মিথ্যা বলছেন। আপনি কে? '
- ' আমি তোমার ভাই। আমি মৃত '।
এমিলির হাত থেকে ফোনটা প্রায় পড়েই যাচ্ছিল।
সে ভাবলো কেউ বুঝি তার সাথে দুষ্টমি করছে।
আরেকটা ম্যাসেজ এলো।
- ' তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য দুঃখিত'।
এমিলির কোন কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না।
- ' আমার নাম ব্রোগান' - পরের ম্যাসেজটি এলো।
এমিলি অস্থির হয়ে উঠলো। অনেক হয়েছে। সে লিখলো-
' থামুন। মজা করার জায়গা পান না? '
- ' আমাকে হত্যা করা হয়েছে '।
এমিলি ভয় পেয়ে গেল। কোন উম্মাদ হয়তো তার নাম্বারটি জোগাড় করে ফেলেছে।
অন্য আরো একটি ম্যাসেজ এলো।
' আমাকে বিশ্বাস করো। তুমি বিপদের মধ্যে আছো। '
এমিলি ভয়ে কাঁপতে লাগলো। কিন্তু সে ফোনের রহস্যময় জগতের মধ্যে পড়ে গেলো। সে ম্যাসেজে লিখতে শুরু করে দিলো।
- ' আপনি যদি মৃত ই হবেন ম্যাসেজ লিখছেন কেমনে? '
- ' আমার দেহ মৃত কিন্তু আমার আত্মা জেগে আছে।'
- ' এটা অসম্ভব '।
- ' আমাকে বিশ্বাস করো। আমার আত্মা তোমার ফোনে ম্যাসেজ তৈরি করতে পারে।'
আরো একটি ম্যাসেজ এলো-
- ' তোমার স্কুলের পর বেক্সলি কবরস্থানে এসো। তোমার ফোনটিও নিয়ে এসো'।
-' কেনো? ' - এমিলি লিখলো।
- ' এটা প্রমান করতে যে আমি তোমার ভাই'।
- ' তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো। কেনো? কেনো '? - এমিলি লিখলো।
- ' দুঃখিত। আমি শুধু তোমাকে বাঁচাতে চাচ্ছি'।
সে না যেতে চাইলেও পরের দিন স্কুল ছুটির পর কি যেন এক অদ্ভূত কৌতুহলে কবরস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। সে কাউকে সাথে নিলো না। ফোনটি নিয়ে সে কবরস্থানে পৌঁছল। সাথে সাথে একটা টেক্সট ম্যাসেজ এলো।
- ' মাঝামাঝি বড় ওক গাছটির কাছে এসো'।
এমিলি বৃহৎ ওক গাছটির কাছে গেলো।
- ' কবরে খোদাই করে লেখা পাথরটি দেখো'।- ম্যাসেজ এলো।
এমিলি অবাক বিষ্ময়ে দেখলো পাথরে খোদাই করা নাম - ব্রোগান জে. ব্রাডলি।
মৃত্যুর সাল টি এমিলির জন্ম সাল।
-' দেখো, আমি তোমার ভাই। সে আমাকে হত্যা করেছিল। রটিয়ে দিয়েছিল গাড়ি এ্যাকসিডেন্ট' '।
- কে? - এমিলি জানতে চাইলো।
- ' খুব দেরি হয়ে গেছে। সে তোমাকে দেখে ফেলেছে'।
-' কে?? '
- " আমাদের সৎ বাবা !! "
- ' আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না'।
- ' সে এটা করে ইনসিউরেন্স এর টাকা তুলে নিতে। দুঃখিত আমি তোমাকে সতর্ক করতে চেষ্টা করেছি'।
এমিলি পিছন থেকে শব্দ শুনতে পেলো।
- ' এমিলি খুব খারাপ করেছো তুমি, তুমি ফোনটা নিয়ে এসেছো'।
এমিলি পিছন ফিরে তাকাল। সে দেখলো তার সৎ পিতা। এক হাতে মোবাইল ফোন, অন্য হাতে একটা রশি।
No comments